আর মাত্র তিনদিন পর মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে যারা পশু কোরবানী দিবেন তারা ইতিমধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কোরবানীর পশু ক্রয়ে। তাই চকরিয়াতে শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে কোরবাণীর পশুর হাট। পশু ক্রয়ের পাশাপাশি মশলার দোকানেও ক্রোতের উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। আবার তারা সেরে নিচ্ছেন কোরবানির প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম। কক্সবাজারের চকরিয়ার বড় বড় বাজার গুলোতে বিভিন্নস্থান থেকে গাড়ি যোগে আসতেছে কোরবানি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া।
চকরিয়া উপজেলার কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কোরবানির পশুর হাটে বেড়েছে ক্রেতা সমাগম। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন পশুর হাট গুলোতে করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বিধিনিষেধও জারী করেছে। কিন্তু এরপরও পশুর হাটে ক্রেতা সাধারণ তা মানছে না। পশুর হাট গুলোতে চলাফেলায় অনেকেই শারীরিক দূরত্ব মানছেন না। দেখা গেছে শারীরিক দূরত্ব বিধি লঙ্ঘন করে কোরবানির পশুর হাট বাজার গুলোতে ঘুরছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এবারের কোরবানি পশুর হাটে মাঝারি সাইজের এক একটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ হাজার এবং বড় সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকার উপরে। গরুর পাশাপাশি এই হাটে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ভেড়া, ছাগল ও মহিষ। একেকটি বড় আকারের খাসি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। অন্যান্য বাজারের তুলনায় ইলিশিয়া বাজারে এবারও সবচেয়ে বড় সাইজের গরুর দেখা মেলেছে। তবে অধিকাংশ বাজারে স্থানীয় জাতের দেশীয়। গরুর চাহিদা বেশি বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট বাজার ইজারাদাররা।
সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার বসে চকরিয়া পৌরসদরের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বাজার ঘনশ্যামবাজার। এই বাজারটি উপজেলার প্রাচীন একটি বাজার। গত শুক্রবার বাজারে দেখা গেছে, কোরবানি উপলক্ষে পুরোবাজার জুড়ে ক্রেতা-গরু-ছাগল ও মহিষে একাকার। এদিন প্রচুর গরু ছাগল বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার ইজারাদার।
ঘনশ্যাম বাজার ইজারাদার পক্ষের পরিচালক রাজীফুল মোস্তফা বলেন, কোরবানি পশুর হাট ঘিরে আমরা বাজারে পশু বেচাকেনা নির্ভিগ্ন করতে সবধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিই। বিশেষ করে রাতের বেলায় যাতে গরু ছাগল বেচাকেনা করা যায় সেইজন্য লাইটিং এবং অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিয়ে বাজারে নিরাপত্তা জোরদার করি। ফলে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে কোরবানি পশু বেচাকেনা নিয়ে দুচিন্তা মুক্ত থাকেন।
এদিকে ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বেশ জমে উঠেছে চকরিয়া পৌরসভার বাসটার্মিনাল, ঘনশ্যামবাজার, মগবাজার কমিউনিটি সেন্টার মাঠ, ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, সাহারবিল পরিষদ বাজার, বদরখালী বাজার, ডুলাহাজারা স্টেশন বাজার, খুটাখালী স্টেশন বাজার, হারবাং স্টেশন বাজার, বেতুয়া বাজার, বরইতলী গরুবাজারসহ অন্তত ২২টির বেশি কোরবানীর পশুর হাট। প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসেছে ইলিশিয়া জমিলা বেগম স্কুল মাঠে। ইজারাদার পক্ষের লোকজন পশুর হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সর্তক করতে মাইকিং করছেন। তারা মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পশু বেচাকেনা করুন।
বর্তমান সময়ে চকরিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বড় পশুর হাট ইলিশিয়া গরু বাজার। রোববার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে দুইদিন বাজারটি বসে। এই বাজার থেকে অন্য সময়েও বিপুল পরিমাণ গরু ছাগল চট্টগ্রাম কক্সবাজার সহ সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে।
ইলিশিয়া গরু বাজারের পরিচালক মোহাম্মদ কায়কোবাদ মাতামুহুরীকে বলেন, সারাবছর আমাদের বাজারে প্রচুর গরু ছাগল ও মহিষ বিক্রি হয়ে থাকে। অন্য বাজারের তুলনায় আমরা গরু বিক্রিতে অতিরিক্ত টোল নিচ্ছিনা। প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া অংকে প্রতিটি গরু ছাগল থেকে হাসিল (টোল) নিয়ে থাকি, সেই কারণে আমাদের বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে আনুপাতিক হারে হাসিল দিয়ে গরু ছাগল বিক্রি করতে পারে। মুলত কমিটির দায়িত্বশীল ভুমিকায় সুন্দর পরিবেশে বাজারটি পরিচালিত হচ্ছে বলে দিনদিন আমাদের বাজারটি সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গত রোববার ইলিশিয়া বাজারে কোরবানি পশু কিনতে আসেন চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট্রো। তিনি জানালেন, আজ গরু দেখতে এসেছি মনমত হলেই আজই কিনবেন। তবে এই হাটে পশুর দাম অন্যান্য বাজারের চেয়ে তুলনামূলক একটু কম।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান মাতামুহুরীকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দেয়ায় কোরবানি পশুর হাটগুলোতে সবধরণের সুরক্ষামুলক উদ্যোগ নিতে আগে থেকে বাজার ইজারদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোরবানি পশু বেচাকেনায় যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় হয়রানির শিকার না হন সেই জন্য বাজার ইজারাদার সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। বেচাকেনায় জালটাকা লেনদেন যাতে করতে না পারে সেদিকেও সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে হালকা বৃষ্টির কারণে বাজার গুলোকে বেচাকেনায় কিছুটা বিগ্ন ঘঠে। ক্রেতা সমাগম কম হয়। পশু বিক্রেতারা অনেকটা কোয়দায় পড়ে যায়। তবে সামনের দিন গুলোতে পরিবেশ অনুকুলে থাকবে বলে অনেক বিক্রেতা আশাবাদী। কারণ একজন বিক্রেতা সারা বছর একটি পশু লালন পালন করে কোরবানীকে বিক্রি করার আশায় থাকে।