নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ গড়ার অভিপ্রায়ে ১৯৯৭ সালে সর্বদলীয় নাগরিকদের সমন্বয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের পাদদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় উপজেলার অন্যতম সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজ।
কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীণ ফাউন্ডার সদস্য হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবি সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ, এলাকার প্রবীণ শিক্ষানুরাগী পরিবার ও সমাজ সংস্কারকরা জড়িত রয়েছেন। ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে অধ্যবদি রাজনীতির বাইরে রয়েছে। কলেজ ফাউন্ডার মেম্বার, পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষকমন্ডলী এবং এলাকার সর্বদলীয় সর্বস্তরের মানুষের আশার প্রতিফলন হিসেবে সকলের সিদ্বান্তক্রমে গেল ২৫ বছর ধরে কলেজ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছে।
আশার কথা হলো ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজকে রাজনীতির বাইরে রাখার সুবাদে এখনো নিরাপদ পরিবেশে পাঠ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই ফলশ্রæতিকে ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজ কক্সবাজার জেলার মধ্যে লেখাপড়ায় অনন্য নজির স্থাপন করেছে। যা প্রতিষ্ঠার পর গেল ২৪ বছরের পরীক্ষার ফলাফলের রের্কড পর্যালোচনা করলে সত্যতা মিলবে এমনটাই জানালেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকমন্ডলী সবাই।
স্থানীয় এলাকাবাসি ও অভিভাবক মহল জানিয়েছেন, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী সবার আগে কলেজকে রাজনীতিমুক্ত লেখাপড়ার পাঠশালা হিসেবে তৈরী করতে যতেষ্ঠ ভুমিকা রেখেছেন। এলাকার সর্বদলীয় সম্মাণিত নাগরিকরা কলেজের ফাউন্ডার সদস্য থাকলেও তিনি সবাইকে বুঝাতে পেরেছেন, কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির প্রথা চালু হলে লেখাপড়ায় ছন্দপতন ঘটবে। গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে হলে, কোমলমতি শিক্ষার্থীকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়তে হলে এখনো শুধুই লেখাপড়ার সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর আহবানে সবাই ডুলাহাজারা কলেজকে রাজনীতির বাইরে রাখার সিদ্বান্তে স্বাগত জানান। এরই বদৌলতে টেকসই ও গুনগতমানের লেখাপড়ার মধ্যদিয়ে কলেজটি আজ জেলার মধ্যে রাজনীতিমুক্ত একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে অগ্রযাত্রার ডানা মেলেছে।
এলাকাবাসি ও অভিভাবক মহল অভিযোগ তুলেছেন, ২৫ বছর ধরে আমাদের ডুলাহাজারা কলেজ রাজনীতির বাইরে আছে। সেই সুবাদে কলেজ ক্যাম্পাসে সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশ বিদ্যমান। পাশাপাশি পরিবেশগত উন্নতির কারণে অন্য কলেজের তুলনায় ডুলাহাজারা কলেজে লেখাপড়ার মান অনেকাংশে ভালো। প্রতিবছর পরীক্ষার রেজাল্ট নির্ণয় করে তাঁর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।
তাই আমরা চাই আগামীতেও ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজকে রাজনীতির বাইরে রাখার জন্য প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তা, সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার সর্বস্তরের জনগনের সার্বিক সহযোগিতা চাই। যাতে কেউ ডুলাহাজারা কলেজকে নিয়ে চক্রান্ত করতে না পারে, কলেজের বর্তমান সুদক্ষ অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর মতো মানুষ গড়ার কারিগরকে নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরী করতে না পারে। আমরা প্রাণের ডুলাহাজারা কলেজের সুনাম ও ঐহিত্য রক্ষার স্বার্থে জড়িত এসব চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একসময় আমাদের ডুলাহাজারা ও পাশের খুটাখালী এলাকার সন্তানরা উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে গিয়ে চকরিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করতো। ওইসময় যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। সহজে গাড়ি পাওয়া যেতো না। নানাধরণের দুর্ভোগ পোহাতো শিক্ষার্থীরা। এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে ১৯৯৭ সালে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাশের এরিয়ায় স্থানীয় সর্বদলীয় সম্মাণিত নাগরিকদের বদন্যতায় ডুলাহাজারা কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
তিনি বলেন, কলেজ ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে আওয়ামীলীগ বিএনপি ও পেশাজীবি সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, অনেক শিক্ষানুরাগী পরিবার জড়িত রয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত। কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আমি সেইদিন ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কৃষকলীগ জেলা কমিটিতে ছিলাম। কিন্তু সেইসময় ডুলাহাজারা কলেজকে সবার পরামর্শে রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে তৈরী করতে আমি নিজেও রাজনীতির চর্চা কমিয়ে দিই। ফাউন্ডার মেম্বার সবাইকে বলি, আপনারা সবাই কমবেশি রাজনীতি করেন, কিন্তু আমরা কলেজকে রাজনীতির বাইরে রাখবো। সবার সিদ্বান্তক্রমে গেল ২৫ বছর ধরে ডুলাহাজারা কলেজ ছাত্র রাজনীতির বাইরে একটি স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মানসম্মত লেখাপড়ায় এগিয়ে চলছে।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে ডুলাহাজারা কলেজের একটি অনুষ্ঠানে মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এসেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে কলেজের নীতিগত শৃঙ্খলা ভেঙ্গে ছাত্রলীগের এক নেতাকে বক্তব্য দিতে সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ ডুলাহাজারা কলেজে কোন ধরণের রাজনৈতিক চর্চা নেই। উল্লেখ্য বিএনপি সরকারের আমলে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদও কলেজের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেইদিন তিনিও ছাত্রদলের নেতাকর্মী সবাইকে অনুষ্ঠানমঞ্চে না উঠতে বারণ করেন। এরআগেও কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের অন্তত ৮জন মন্ত্রী ডুলাহাজারা কলেজে এসেছিলেন। কেউ তো ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কথা বলেনি।
কিন্তু ছাত্রলীগের ওই নেতাকে বক্তব্যের সুযোগ না দেয়ার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বাসিন্দা চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের এক ছেলে বর্তমানে নানাধরণের চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। তাঁর জন্মের আগে আমি আওয়ামী রাজনীতি করতাম, অথচ সেই ছেলে এখন আমাকে জড়িয়ে পত্রিকায় খবর ছাপিয়ে জামায়াত রাজাকার হিসেবে ট্রিট করছে। ডুলাহাজারা কলেজের নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশকে রাজনৈতিক রং লাগাতে অপচেষ্ঠা করছে। তাঁর এইধরণের ভিত্তিহীন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা সেইদিন অবহেলিত জনপদে ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করছিলাম নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদেরকে আলোকিত মানুষ গড়ার একটি ভিশন নিয়ে। আমি ২৫ বছরের দায়িত্বপালনকালীণ সময়ে চেষ্ঠা করেছি, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একটি আদর্শ পাঠশালা হিসেবে গড়ে তুলতে। বিদায় বেলায় একটি কথা বলবো শিক্ষানুরাগী সবাই ডুলাহাজারা কলেজের পাশে ছিলেন। আগামীতেও থাকবেন ইনশাল্লাহ।