দীপলাল চক্রবর্তী। বয়স ৫৩ ছুই ছুই। একজন সফল সুর ও সংগীত পরিচালক, প্রযোজক। সংগীত জগতে পরিশ্রমী, মেধাবী মানুষ হিসাবে কক্সবাজার জেলায় সংগীত অঙ্গণে পরিচিতি লাভ করেছেন।
শুধু গানে নয়, শিক্ষকতাও করেন তিনি। চকরিয়াতে যে কজন শিল্পী দেখা গেছে তাদের দীপলাল অন্যতম। জীবদ্দশায় দুই দশকেরও বেশি সময় সমান দাপটের সঙ্গে অবদান রাখছেন এই গুনী মানুষটি। সমান পারদর্শিতা দেখানো এই গুণী শিল্পীর বর্ণাঢ্য জীবন।
দীর্ঘ ২২টি বছর কক্সবাজার, চকরিয়া, লামা, আলীকদম গানের থলে কাধে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। যার হাত ধরে শতশত সংগীত শিল্পী, তবলা শিল্পী তালিম নিয়ে দেশে অবদান রেখে যাচ্ছেন। দীপলাল চক্রবর্ত্তী অন্তরা সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক। তার জন্ম পার্বত্য বান্দরবানের পাহাড় ঘেরা রুমা উপজেলার রুমা বাজারের বড়ুয়াপাড়া গ্রামে। ছোট বেলায় রুমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ৫ম শ্রেণি, রুমা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি সর্বশেষ নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজ হতে বিএ পাশ করেন। ফুটবল, ব্যাটমিন্টন, ভলিবল এক কথায় একজন সফল ক্রিড়াবিদ বলা যায়।
৯০ দশকের দিকে দীপলাল একজন খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিতি রয়েছে। তিনি কিছু সময় ব্যবসাও করেছেন। ১৯৯৫ সালে বিবাহিত জীবন শুরু করেন। সংসারে দুই মেয়ে রয়েছে। তারাও সংগীত চর্চায় ব্যস্থ। ১৯৯৭ সালে রুমা বাজারে অগ্নিকান্ডে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে সর্বশান্ত হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পৌরশহরে চলে আসেন। দীপলাল ছোট বেলা থেকে গানের প্রতি দূর্বলতা ছিলো। অল্প কয়দিনে গানের বিস্তার ঘটায় দীপলাল। শুরুতে তেমন সংগীত গুরুর কাছে শেখার সুযোগ হয়নি। তবে বিশিষ্ট কীর্তনিয়া বাবু নিরঞ্জন কাছ হাতেখড়ি। তারপর কলেজ জীবন, খেলাধুলার পাশাপাশি গান করতেন। সবাব জাত তবলাও বাজাতেন। ১৯৯৮ সালে চকরিয়ায় আসার পর দেখা হয় বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সন্তোষ কুমার সুশীলের সাথে। তার পরিচালিত সংগীত স্কুল সঙ্গীত নিকেতন থেকে সংগীত জীবন শুরু হয়। ওস্তাদ সন্তোষের কাছ থেকে গানের তালিম নেন দীপলাল। দীপলাল প্রায় ৪ বছর পর ধ্রব পরিষদ বাংলাদেশ একটি বেসরকারী সংগীত বোর্ডে রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীতে পাচ বার বর্ষসেরা দশে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০০২ সালে সেই থেকে তাঁর ধ্যান জ্ঞান শুধু সংগীত নিয়ে পরপর অনেক জ্ঞানী সংগীত অজয় সুর বন্ধু অশোক চৌধুরী, স্বর্নময় চক্রবর্ত্তী জয়ন্তলালা, শীলা মোমেনের কাছে সংগীতের তালীম নেন এবং সর্বশেষ সংগীতে বি.মির্জ্জ ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও দেশবরেণ্য অনেক গুনী শিল্পীর পরশ পান তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের রবীন্দ্র ও নজরুল শিল্পী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ বেতারের সুর ও সংগীত পরিচালক, প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তার পাশাপাশি চকরিয়া ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুলের এডমিন অফিসার হিসাব কর্মরত রয়েছেন। আর অন্তরা সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। অন্তরা আজ চকরিয়া নয় কক্সবাজারে জেলায় সুনাম অর্জন করেছেন। সংগীত স্কুলে ৯ জন শিক্ষক এবং ২৫০ গানের ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রতিবছর এই স্কুল থেকে শতশত ছাত্রছাত্রী গানে তালিম নিচ্ছেন। সরকারি সহায়তা ছাড়াই এ স্কুল আজ সংগীত জগতে অবদান রেখে যাচ্ছেন।
দীপলাল চক্রবর্ত্তী বলেন, যথাযথ সাহায্য পান না শুধু ছাত্র/ছাত্রীদের সামান্য বেতনের উপর নির্ভর করে চলে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানে অনেক সমস্যাও রয়েছে। নেই কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি। যথাযথ সরকারি সহযোগিতা পেলে অনেক দুর এগিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অন্তরা থেকে চ্যানেল আই সেরা কন্ঠ শিল্পী মারুফা জান্নাত তৃষা, ক্ষুদে গানরাজ শাহরিয়াসহ কক্সবাজারের ফারিয়া জাহান টুইনঙ্কল, বেবী দে, শিউলী দে, ববি, রিয়া বড়ুয়া সহ অনেকেই তার হাতে গড়া শিল্পী। এ বছর বাংলাদেশ বেতার যে অডিশন হয় সংগীতের সকল শাখায় ২৭ জন কৃতকার্য হয়। এরমধ্যে ৮ জন অন্তরার শিল্পী। তিনি সকলের দোয়া/আশির্বাদ চান এবং অন্তরার প্রতি সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সহায়তা চান। দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিশাল ভূমিকা রাখাবে বলে আশা করেন দীপলাল চক্রবর্ত্তী।