কক্সবাজারে ১০ হাজার গ্রাহকদের জমানো প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। বীমার মেয়াদ পূরণের ২ বছর অনেকের ৩ বছর পূরনের পরও টাকা পরিশোধ করছে না কোম্পানীটি। ফলে নিজেদের জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এতে যে কোন মুহুর্তে একটি বড়ধরণের দূর্ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অনেকে। তাই বিষয়টি নিয়ে দ্রæত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভোক্তভোগীরা।
পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়াপাড়ার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী দানু মিয়া জানান, আমি এক নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে ১২-১৩ বছর আগে কক্সবাজার ফারইষ্ট বীমা কোম্পানীতে বীমা করেছিলাম। সেটা মেয়াদ পূর্ন হয়েছে প্রায় ২ বছর হতে চলেছে সেখানে আমার নিজের এবং স্ত্রী, ছেলে, মেয়ের জন্য ও বীমা করেছিলাম। তারমধ্যে ৩টি বীমার মেয়াদ পূর্ন হয়েছে, সেখানে টাকার পরিমান প্রায় ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ফারইষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ দেব কাল দেব বলে প্রায় ২বছর সময় অতিক্রম হওয়ার পরও আমার জমানো টাকা আমাকে ফেরত দিচ্ছে না। এরমধ্যে সবাই জানেন, করোনাকালীন সময়ে প্রবাসীদের অবস্থা। বর্তমানে আমার টাকার খুবই প্রয়োজন হলেও আমার নিজের জমানো টাকা আমি ফেরত পাচ্ছি না। একই এলাকার সাকেরা বেগম বলেন, আমার স্বামী সৌদিতে থাকা কালিন আমি ফারইষ্টে বীমে করেছিলাম। বছরে ৬ হাজার টাকা করে ৫ থেকে ৭ বছর বীমার কিস্তি পরিশোধ করেছি। এখন করোনা পরিস্থিতিতে স্বামী বিদেশ থেকে চলে আসার পরে আমার জমানো টাকা ফেরত চাইতে গেলে তারা টাকা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছিল। পরে অনেক ঝগড়া ঝাটি করার পরে লভ্যাংশ ছাড়া জমানো টাকার মধ্যে তারা কিছু কেটে রেখে অল্প টাকা দেওয়ার কথা থাকলে ও আজকে দেড় বছর টাকা দিচ্ছে না। এরমধ্যে অন্তত ২০-৩০ বার কক্সবাজার বাজারঘাটাস্থ অফিসে গিয়েছিলাম কোন কাজ হয়নি।
সরজমিনে শহরের বাজারঘাটাস্থ ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যূরেন্স কোম্পানীতে গিয়ে দেখা গেছে, ১ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১০ জন মহিলা এসেছে টাকার জন্য, সবাই আশারবানী শুনে চলে যাচ্ছে। অনেকে দেখা গেছে চোখের পানি মুচতে। কিন্তু এর মাঝেও থেমে নেই ফারইষ্ট কোম্পানীর প্রতারণা তারা এখনো মাঠপর্যায়ে কর্মী দিয়ে মানুষকে বীমা করানোর জন্য নানাভাবে অনুরোধ করছে, আবার তাদের প্রতারণার স্বীকার হয়ে অনেকে এখনো টাকা জমা দিচ্ছে। এসময় শহরের পাহাড়তলী এলাকা আছিয়া খাতুন নামের এক মহিলার কাছে জানতে চাইলে কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি পায়ে ব্যাথার জন্য ঠিকমত হাটতে পারিনা। বর্তমানে লিফট লাগিয়েছে কিন্তু এর আগে ৬ তলা অফিসে জীবনের ঝুকি নিয়ে আর মৃত্যু যন্ত্রনা নিয়ে তাদের অফিসে উঠেছি আমার জমানো টাকার জন্য, তবে আমার দুটি বীমার মধ্যে একটির টাকা পেয়েছি তাও কোন লাভ দেয়নি। বাকি একটার টাকা এখনো পায়নি। অথচ মেয়াদ পূর্ন হয়েছে ২বছর মত হবে। তিনি জানান, আমাদের টাকা দিতে না পারলেও তাদের কর্মীরা এখনো আমাদের এলাকায় গিয়ে বীমা করানোর জন্য মানুষকে বলছে।
এদিকে গ্রাহকদে এমন হয়রানী আর অনিয়ম নিয়ে ফারইষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে চাইলেও কেও কোন উত্তর দিতে নারাজ, সবার একই কথা হেড অফিসের সমস্যা এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। তবে হেড অফিসের কারো নাম্বার বা যোগাযোগের মাধ্যম জানতে চাইলেও তা দিতে নারাজ তারা। এসময় তাদের কাছে প্রশ্ন করা হলে গ্রাহকদের টাকা দিতে না পারলে কেন নতুন করে বীমা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ব্যবসাতো করতে হবে।
এব্যাপারে কক্সবাজার ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর কক্সবাজারের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১০ হাজার গ্রাহকের টাকা বকেয়া আছে। আসলে ফারইষ্ট এক সময় দেশের এক নাম্বার বীমা কোম্পানী ছিল কিন্তু কিছু সমস্যার কারনে বড়ধরনের আর্থিক সংকটে পড়েছে। তবে আশা করি এখন সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে, টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে, আস্তে আস্তে সবাই টাকা পাবে।
তবে সেই কথা সন্তুষ্ট নয় সাধারণ গ্রাহকরা তাদের দাবী কষ্ট করে নিজের টাকা জমিয়ে সেটা ঠিক সময়ে না পায় তাহলে আমরা প্রয়োজনে ফারইষ্টের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে নজর দেওয়ার ও দাবী জানান তারা।