গেল বোরো সংগ্রহ কর্মসূচিতে খাদ্য বিভাগের সাথে চাল সরবরাহ চুক্তি না করা এবং চুক্তি করেও চাল সরবরাহ না করায় চট্টগ্রামের ১৬ টি রাইস মিলের লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ। এছাড়া ৫টি চালকলের মালিককে কারণ দর্শানোর পাশাপাশি তাদের অসরবরাহকৃত চালের আনুপাতিক হারে জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে আদেশ জারি করে।
এর মধ্যে নগরের চান্দগাঁওয়ের ১টি, পাহাড়তলী এলাকার ৫টি, ফটিকছড়ি, বোয়ালখালী ও আনোয়ারার ২টি করে এবং মিরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, লোহাগাড়া ও কর্ণফুলীর ১টি করে রাইস মিল রয়েছে। বাতিল হওয়া রাইস মিলগুলো হলো নগরের চান্দগাঁও এলাকার মো. সাইফুদ্দীনের মালিকানাধীন মেসার্স রহমানিয়া মডার্ন রাইস মিল ও পাহাড়তলীর হাজী আবদুল মালেকের মালিকানাধীন মেসার্স শাহজালাল অটো রাইস মিল, মোজাম্মেল হকের মালিকানাধীন মেসার্স শাহজালাল অটো রাইস মিল ও মেসার্স আল আমিন অটো রাইস মিল, হোসনেয়ারা বেগমের মালিকানাধীন মেসার্স আল মামুন অটো রাইস মিল এবং জাবেদ হোসেনের মালিকানাধীন মেসার্স হাফেজ আহমদ অটো রাইস মিল।
এছাড়া চট্টগ্রামের সাত উপজেলার মধ্যে মিরসরাইয়ের নুরুল আলমের মালিকানাধীন মেসার্স হাজী আলম রাইস মিল, ফটিকছড়ি উপজেলার সোহেল রানার মালিকানাধীন মেসার্স মদিনা মেজর রাইস মিল ও মেসার্স মদিনা অটোমটিক ড্রায়ার রাইস মিল, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার আহমদ সফুর মালিকানাধীন মেসার্স আল মদিনা অটো রাইস মিল, বোয়ালখালী উপজেলার মেহেদি হাসানের মালিকানাধীন মেসার্স দরবার অটো রাইস মিল ও মো. সৈয়দের মেসার্স তৈয়বিয়া অটো রাইস মিল। লোহাগাড়া উপজেলার মমতাজ আহমদের মেসার্স পঠান ভান্ডার অটো রাইস মিল, আনায়ারা উপজেলার জাহেদুল হকের মালিকানাধীন মেসার্স জাহেদ অটোরাইস মিল ও আকতার হোসেনের মেসার্স এন হক অটো রাইস মিল এবং কর্ণফুলী উপজেলার আবু তাহেরের মালিকানাধীন মেসার্স শাহ আমির অটো রাইস মিল। চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের বলেন, অভ্যন্তরীণ বোরো সংগ্রহ মৌসুমে চুক্তির যোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি করেনি চট্টগ্রামের এমন ১৬ টি রাইসমিলের যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স বাতিল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চুক্তি করেছে কিন্তু কোনো চাল সরবরাহ করেনি এমন একটি মিলের জামানত বাজেয়াপ্তসহ যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স বাতিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া চুক্তির পরিমাণের ৮০ শতাংশের কম সরবরাহকারী চারটি রাইসমিলকে বিশেষ বিবেচনায় অসরবরাহ করা চালের অনুপাতিক হারে জামানত বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারের বোরো সংগ্রহ কর্মসূচিতে সহযোগিতা না করায় চট্টগ্রামে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের বোরো মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে ৮২ হাজার ৫৫৬ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার ১০২ মেট্রিকটন ধান। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও রয়েছে বড় ফারাক। ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৪ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৭১ হাজার ৮১৭ মেট্রিকটন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে ২২ হাজার ৭০৮ মেট্রিকটন আতপ চাল সংগ্রহের বিপরীতে অর্জন হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ৫৫৭ মেট্রিকটন। লাইসেন্স বাতিলকৃত এসব চালকল মালিকদের সহযোগিতা থাকলে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতো বলে মনে করছেন খাদ্য বিভাগ।