চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তর পাইকারী বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। ডিও বেচাকেনা হঠাৎ করেই যেন হাহাকার অবস্থা চলছে। গত দুইদিনের ব্যবধানে মণ প্রতি প্রায় দুশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ভোজ্যতেলের। ডলার সল্পতা ও বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দিনভর অস্থির ছিল ডিও বেচাকেনা। এর সাথে সমান ভাবে পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেছে ভোগ্যপণ্যের দামও। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডিও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। নতুন এলসি (ঋণপত্র) খোলায় ব্যাংকে ডলার স্বল্পতা ও বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে হঠাৎ করেই বাজার উর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে।’
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই পামঅয়েলের ডিও উত্থান-পতন করছে। মধ্যস্বত্বভোগীরাই বাজারে ঘুরেফিরে ডিও বেচাকেনা করছেন। সকালে ৪ হাজার ৬শ বা ৪ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে দফায় দফায় বেড়ে ৪ হাজার ৭৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। আবার বাকিতে তারচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বাজারে পতন ঘটে। মণ প্রতি (৩৭ দশমিক ৩২০ কেজি) বিক্রি হয় চার হাজার ৬৮০ টাকা দরে। একই অবস্থা সয়াবিন তেলেও। সয়াবিন তেলের ডিও বাড়তে বাড়তে ছয় হাজার ৬৭০ টাকায় ঠেকে। বাকিতে আবার তারও বেশি দামে বিক্রি হয়। সন্ধ্যায় তা কমে ছয় হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের বড় ব্যবসায়ী মো. আলমগীর পারভেজ বলেন, ‘ডলারের দামবৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে বুকিং দর বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে।’ বিশ্ববাজারে মণ প্রতি দু-আড়াইশ ডলার দাম বেড়েছে উল্লেখ করে আলমগীর পারভেজ বলেন, এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি বাজারে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমানোর প্রভাবে দেশীয় বাজারেও পামঅয়েলের দাম মণ প্রতি ৩২০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত নেমেছিল।
এদিকে ভোজ্যতেলের সাথে পাল্লা দিয়ে খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে বাড়ছে সব ভোগ্যপণ্যের দাম । চিনির দাম বেড়েছে আগেই। এখন এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ, আদা, রসুন এবং গরম মসলার দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ^বাজারে বাজারে ভোগ্যপণ্যের বুকিং দর বাড়তি। তাই বাজার চড়া। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসি খোলার অনুমতিও কম দিচ্ছে। একইদিন খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারীতে প্রতিমণ চিনির দাম ১ হাজার ১৮০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬৮০ টাকায়। মশুর ডাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকা, মটর ডাল কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা। অন্যদিকে ভারতীয় গম মণ প্রতি ৮০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। এছাড়া এলাচ কেজিতে ৮৫ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২৬৫ টাকা, দারচিনি ২০ টাকা কমে ৩০০ টাকা, লবঙ্গ কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং চিকন জিরা ২০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকায়। এছাড়া পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা এবং আদা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। হলুদ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় মরিচ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকায়।
এদিকে খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঝখানে ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার কারণে এখনো ঋণপত্র (এলসি) খুলেনি। তবে এখন ডলারের কিছুটা কমার ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে চাইলে ব্যাংকগুলো থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এলসি খোলার অনুমতি না পাওয়ায় অনেকে পর্যাপ্ত ভোগ্যপণ্যের আমদানি করতে পারছেন না। জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বর্তমানে বিশ^বাজারে বাজারে বুকিং দর বেড়েছে। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্য শস্য পরিবহন কমে গেছে। অপরদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসিও কম দিচ্ছে। এসব বিষয়ে কারণে মূলত বাজার চড়া।