অবশেষে প্রশাসনের টনক নডেছে। চকরিয়া জমজম হাসপাতালে ভূয়া চিকিৎসক আটকের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। জমজম হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও রোগীদের নানা হয়রানীর অভিযোগ ছিলো দীর্ঘদিন ধরে।
এবার সবচেয় বেশি আলোচিত হচ্ছে ভূয়া চিকিৎসক আটক নিয়ে। ইতোপূর্বে চকরিয়া সিটি হাসপাতাল থেকেও এক ভূয়া চিকিৎসক গ্রেফতার হয়েছিলো।
এদিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হাসপাতাল গুলোতে কি ধরণের চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাগজপত্র আছে কিনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে মানুষ হয়রানী এমন তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভণ দত্ত।
১৭ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোভণ দত্ত স্বাক্ষরিত ২০টি হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টার গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল গুলো হচ্ছে, চকরিয়া জমজম হাসপাতাল, আছিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতাল, চকরিয়া সিটি হাসপাতাল, এশিয়ান হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, শেভরণ ল্যাভ/হাসপাতাল, মা-শিশু জেনারেল হাসপাতাল, ইউনিক হাসপাতাল, বদরখালী জেনারেল হাসপাতাল, বদরখালী ক্লিানেভা হাসপাতাল, বরইতলী মা-শিশু হাসপাতাল, মালমুঘাট মা-মনি হাসপাতাল, বরইতলী সেন্ট্রাল কেয়ার, আল নুর হাসপাতাল, রয়েল ডায়াগণষ্টিক সেন্টার, চকরিয়া জেনারেল এন্ড ট্রমা সেন্টার ও সেন্ট্রাল কেয়ার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিঠি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা. শোভণ দত্ত বলেন, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। এমন একটি সেবামুলক কাজকে চিকিৎসার নামে হয়রানির শিকার হচ্ছে। ভূয়া চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া কোনমতে গ্রহণ যোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, চকরিয়ার জমজম হাসপাতালসহ ২০টি হাসপাতাল ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
সচেতনমহল জানান, চকরিয়া জমজম হাসপাতাল যে প্রতারণা করেছে, এরই মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘ পাঁচবছর ধরে জমজম হাসপাতালে হুমায়ন কবির নামের একজন ভূয়া চিকিৎসক ‘সেবা’ দিয়ে আসছিল এই হাসপাতালে।
এর মাধ্যমে হাসপাতালটি যা করেছে, সাধারণ রোগীদের সাথে একধরণের প্রতারণা। হুমায়ন কবির চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতোই।
দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ অপচিকিৎসা।
এছাড়াও জমজম হাসপাতালে অর্ধশতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম দিয়ে সাইনবোর্ডে ঝুলানো হলেও মুলত ৫ জন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিদিন শতশত রোগী আসলেও বেশির ভাগ নার্স ও ডাক্তারের সহকারী দিয়ে চিকিৎসা করছেন বলে অভিযোগ উঠে।
গত ১৬ নভেম্বর ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ্জ জামান নেতৃত্বে জমজম হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেন।
এসময় ভূয়া চিকিৎসক হুমায়ন কবিরকে গ্রেফতার করেন।
চিকিৎসক হিসেবে কোন ধরণের সনদ দেখাতে পারেনি। এসময় তাকে ৫০হাজার টাকা জরিমানা ও তিনমাসের জেল দেন। অনাদায়ে আরও ১৫দিনের জেল দেন।
ওই ভূয়া চিকিৎসক দাবী করেন, লিভার, পরিপাকতন্ত্র, ডায়াবেটিসের মতো রোগের চিকিৎসা ও নিজেকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলে দাবী করে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা করতেন তিনি।
চকরিয়া জমজম হাসপাতালের পরিচালক গোলাম কবির বলেন, হুমায়ন কবির বিগত পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।
নিয়ম কানুন মেনে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার কাগজপত্র ভূয়া জানার পর প্রশাসন থেকে সময়ও চেয়েছিলাম। পরবর্তীতে ওই চিকিৎসকের সনদ না থাকায় ভ্রাম্যমান আদালত তাকে সাজা দেন।