আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ভারতের সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আগমন, বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ দেখা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বদলে গেছে, আজকে যে ছেলেটি ১৪ বছর আগে বিদেশ গেছে, সে এসে নিজের শহর চিনতে পারে না, নিজের গ্রাম চিনতে পারে না। “পায়ে চলা মেঠোপথ গেছে বহুদূর, রাখালি বাঁশির সুর সরল মধুর” সেটি শুধু কবিতায় আছে, এখন সহজে পায়ে চলা মেঠোপথ গ্রামেও খুঁজে পাওয়া যায় না।’
হাসান মাহমুদ বলেন ‘আমরা দুই দেশের নাগরিক বটে। কিন্তু আমরা একই পাখির কলতান শুনি, একই নদীর অববাহিকায় আমরা বেড়ে উঠি। একই মেঘ আমাদের এখানে বৃষ্টি বর্ষণ করে।
কাঁটাতারের বেড়া আমাদের এই বন্ধনকে বিভক্ত করতে পারেনি। কাঁটাতারের বেড়া আমাদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও ভাষা, সবশেষে আমাদের ভালোবাসাকে বিভক্ত করতে পারেনি।’
এখন আর আকাশ থেকে কুঁড়েঘর দেখা যায় না উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাস্তবিক অর্থে কুঁড়েঘর হারিয়ে গেছে, এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের দৃশ্য।
বাংলাদেশের এই বদলে যাওয়ার পেছনে ভারতের সঙ্গে গত ১৪ বছর ধরে সুসম্পর্কের অবদান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।
সেই গভীর সম্পর্ক আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’ রবিবার (৮ জানুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বাংলাদেশ সফরে আসা কলকাতার ২৫ এবং আসাম ও গৌহাটির ৯ সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে ভারতীয় সাংবাদিকদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতির স্থান পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব পরিদর্শন করেন তথ্যমন্ত্রী।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মোহাম্মদ রেজার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক শহীদল্লাহ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, সাধারণ সম্পাদক কিংসুক প্রামাণিক ও আসামের সিনিয়র সাংবাদিক মনোজ কুমার গোস্বামী প্রমুখ।
হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে। সেইসঙ্গে মানুষে-মানুষে আত্মিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের এই আত্মিক সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে একাত্ম হয়েছে একাত্তর সালে। যখন আমাদের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনী রক্ত ঝরিয়েছে। আমাদের কষ্টের সঙ্গে ভারতের মানুষও কষ্ট স্বীকার করেছে। এক কোটির বেশি মানুষ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। যতই কাঁটাতারের বেড়া দিক, কিংবা অন্য কোনও আইন-কানুন হোক না কেন, রক্তের অক্ষরে লেখা হৃদয়ের এই বন্ধন কখনও বিভক্ত হবে না।’
সাংবাদিকরা সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের আত্মিক খোরাক জাগান সাংবাদিকরা, গোপন বিষয়কে উন্মোচিত করেন। সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সঠিক পথে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা ভূমিকা রাখেন। এখান থেকে গিয়ে যখন আপনারা কলম ধরবেন কিংবা টেলিভিশনে রিপোর্টিং করবেন তখন দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীরতর হবে। আমাদের দেশের বদলে যাওয়ার গল্পটা ভারতবাসী জানবে, বিশ্বাবাসী জানবে।’
বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, ধান উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম। কিন্তু আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীতে ৯২তম। ঝড়, বন্যা জলোচ্ছ¡াসের দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এখানে নিত্যসঙ্গী। কিন্তু সবকিছুকে পরাভূত করে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে উন্নয়নের সোপানে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।’
পুরো পৃথিবী আজ বাংলাদেশের প্রশংসা করে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা দেখেও দেখেন না, শোনেও শোনেন না। তারা ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলেন কোনও উন্নয়ন হয়নি। পদ্মা সেতু দিয়ে ওপারে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে বলেন কিছুই হয়নি। এটিই আমাদের দুর্ভাগ্য।’
মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শহীদুল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি তপন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মু শামসুল ইসলাম প্রমুখ।