কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম বানিয়ারছড়া এলাকার হতদরিদ্র মেস্ত্রী মনজুর আলম পরিবারের ৮সদস্যের ঘানি একাই টানতে পারছিলেন না। বৃদ্ধ বয়সে এসেও তিনি একাই পরিবার সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
এরই মধ্যে বেশির ভাগ সময় কাজ না থাকায় বেকার থাকতে হতো। এই অবস্থায় পেশা বদল করে তিনি ইজিবাইক (টমটম) চালানো শুরু করেন।
এভাবে তিনি পরিবার সদস্যদের মুখে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করছিলেন। কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে মেঝ ছেলে শওকত মিয়াকে মাত্র গতমাসে ডিসেম্বরের ১১ তারিখ দুবাইয়ে প্রবাস জীবনে পাঠিয়েছেন পরিবারে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ফেরানোর আশায়। কিন্তু মাস না যেতেই তার মৃত্যুর খবর আসলো বাড়িতে।
পরিবার সদস্যরা জানান, সোমবার ভোরের আলো ফোটার সাথেই দুবাই থেকে বাবা মনজুর আলমকে ফোনে জানায়, শওকত ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে। শওকতের বৃদ্ধ বাবা মনজুর আলম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের কোন অসুখ ছিল না।
এরপরও সে কেনো ঘুমের মধ্যেই মারা গেল। সেটা আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমার এক বুক আশা ছিল, শওকত বিদেশ গিয়ে কষ্ট করে টাকা উপার্জন করবে। কয়েকবছর পর সেই উপার্জনের টাকা দিয়ে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করবো। কিন্তু দুবাই যাওয়ার একমাস না হতেই কেনো আমাকে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হলো।
তিনি বলেন–আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেনা করে শওকতকে দুবাই পাঠিয়েছি। সেখানে দর্জির কাজ করার জন্য বড় কন্যার জামাতা মোহাম্মদ হোসেন ভিসার ব্যবস্থা করেন। ঠিকমতো দুবাই পৌঁছে বোন জামাই হোসেনের সঙ্গেই দেরাতে থাকতো সে।
সোমবার ভোরে মেয়ের জামাই ফোন করে জানায়, শওকত ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে। সে নাকি ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক করেছে। এই কথা শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায়। প্রবাসে যাওয়ার একমাস না পেরোতেই শওকতের মৃত্যুর খবরটি আমিও শুনেছি। দুবাই থেকে শওকতের লাশ দেশে আনতে যথাযথ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, দুবাইয়ে কর্মরত থাকাবস্থায় বরইতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা শওকত নামের এক যুবক ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন বলে শুনেছি। সেখান থেকে তার মরদেহ দেশে আনার ক্ষেত্রে পরিবার আবেদন করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।