1. iliycharman7951@gmail.com : admin :
হারবাংয়ে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন - matamuhuri - মাতামুহুরী
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন

হারবাংয়ে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
  • আপডেট : শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১০৪ পঠিত

চকরিয়া উপজেলার হারবাংয়ে খতিয়াভূক্ত জমি থেকে গত তিনমাস ধরেই চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালানোর পরও কোন কিছু তোয়াক্কা করছে না বালুদস্যুরা। ড্রেজার মেশিন দিয়ে অব্যাহত বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে তিন গ্রামের তিন শতাধিক সংখ্যালগু পরিবার। একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে এই বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জমির মালিকগণ। ক্ষতিগ্রস্থরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণও দাবী করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ধরপাড়ার বাসিন্দা মৃত মানিক লাল ধরের নামীয় জমি বিএস ১৮৮০, সৃজিত খতিয়ান নং ৪০১০ এর বিএস ২৫২২ দাগে ৩.৩৬ একর জমি রয়েছে। সেখানে তার পুত্রগণ ও পরিবারের অন্য সদস্যরা বসবাস করেন। জমির আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, বাঁশবাগান ও শতবর্ষী তাল গাছ রয়েছে। এছাড়াও কিছু জমিতে চাষবাসসহ শীতকালীন সবজি চাষও করা হয়েছে।

এদিকে চিহিৃত বালুদস্যু নানা অপরাধের হোতা হারবাং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নাপিতের চিতামুড়া গ্রামের মৃত আবুল কালামের পুত্র নাছির উদ্দিন, একই ওয়ার্ডের চরপাড়ার কবির আহমদের পুত্র নাজেম উদ্দিন ও ৬নং ওয়ার্ডের সিকদারপাড়ার মৃত ইছাকের পুত্র শেখ বেলালের নেতৃত্বে ৫-৬ জন গত তিনমাস ধরে মৃত মানিক লাল ধরের বাড়ির পাশের ছড়াখালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। বালুদস্যুরা কারও কথা শুনছে না। তাদেরকে নিষেধ করার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকী প্রশাসনকেও তোয়াক্কা করছে না। দিনের পর দিন বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে।

বালু উত্তোলনের কারণে বাড়ির চারপাশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পার ভেঙ্গে তিনগ্রামের বসতি গুলো বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হারবাংয়ের একমাত্র বেড়িবাধটি ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে স্থানীয়দের খতিয়ানভূক্ত কৃষি জমি ও অর্ধশতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছাড়াখালে বিলিন হয়ে গেছে। তাদের নিষেধ করলে উল্টো হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। বালুদস্যুরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় বালু উত্তোলন করায় অসহায় হয়ে পড়েছে তিনগ্রামের সংখ্যালগু পরিবার গুলো। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আগামী বর্ষা মৌসুমে আশপাশের গ্রাম গুলো বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসীরা।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মৃত মানিক লাল ধরের পুত্র অশোক ধর ও কেশব কুমার ধর চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন দপ্তরে বরাবর বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৪ জানুয়ারি সকালে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মো. রাহাতুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়েছে।

এসময় ড্রেজার মেশিন, বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেছে। ওইসময় বালু ভর্তি একটি গাড়িও আটক করেছে। আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু অভিযানের একদিন পর বালুদস্যু নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে পূনরায় বাল উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
মানিক লাল ধরের পুত্র অশোক ধর ও কেশব কুমার ধর বলেন, গত তিনমাস ধরে বালুদস্যুরা নিয়মনীতি না মেনে বালু কেটে নেয়ার কারণে আমাদের বসতঘর গুলো হুমকিতে রয়েছে। বাড়ির আশপাশ থেকে অবাদে বালু কেটে বিক্রি করছে। একাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে এই বালু উত্তোলন করছে। আশাপাশের মঠ-মন্দির, ফসলি জমি, স্কুলসহ বসতবাড়ি রয়েছে হুমকিতে। বর্ষা এলেই যেন সব বিলীন হয়ে যাবে এমন ভয়ে দিন যাপন করছে তিন গ্রামের পরিবার গুলো।

বিশেষ করে হারবাং ইউনিয়নের ধরপাড়া, রোসাইঙ্গাপাড়া, নাথপাড়ার কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সেবাকুলা মায়ের বটবৃক্ত বিলিন হওয়ার পথে। ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ছড়াখালে পানি বাড়ার সাথেই ভাঙ্গন শুরু হয়। তারা অনেক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে এলাকার সাধারণ লোকজন কিছু বলতে সাহসও পায় না।

কয়েকজন প্রতিবেশিরা জানান, হারবাং ছড়াখালের বেড়িবাধের আশেপাশে থেকে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে বর্ষা এলেই ছড়াখালের পাড়ে ব্যাপক ভাঙ্গন হয়। অব্যাহত বালু উত্তোলণের সরকারি বেড়ি বাধটির বিশাল অংশ ভেঙ্গে গেছে। বসতবাড়ি হারিয়েছে অনেকেই।

তারা আরও জানান, বালু বোঝাই বড় বড় ট্রাক চলাচলের ফলে দিনের বেলায় ধুলাবালুতে থাকাই যায় না। ঘরবাড়ি টিনে ধুলার স্তর পরে অল্পদিনেই নষ্ট হয়ে যায়। ড্রেজার মেশিনের শব্দ ও ধুলাবালির কারণে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সেখানকার সাধারণ মানুষ। এলাকবাসীর দাবি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, হারবাং এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। এরপরও কেউ যদি অবৈধ বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে আবারও অভিযান চালানো হবে। অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Theme Customized BY Iliaych