রাতে সে কোন পণ্য কিনলে সকালে ঘুষ থেকে উঠে শুনা যাচ্ছে সেই পণ্যের দাম বাড়তি। আগে যে কোন পণ্যের দাম বাড়তো বছর শেষে এখন মাসে নয় দিনে দিনেই বাড়ছে সবধরনের নিত্যপণ্যের দাম। বাসাবাড়িতে ব্যবহারের বোতলজাত গ্যাসের দাম এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, পানের খিলি ৭ টাকা, পানের বিরা ইতিহাসে রেকর্ড ৫৫০ টাকা, তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, শুকনো মরিচের কেজি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে এখন বাজারে ৫৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে শুকনো মরিচ।
যা কয়েক মাস আগেও ছিল ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা। আটা ৬৫, ময়দা রেকর্ড ৮৫ টাকা, এছাড়া শীতকালীন সবজির দামও যেন আকাশ চুম্বির কাচা মরিচের কেজি এখনো ১০০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, ফুল কপি ৪৫, বাধা কপি কেজি ৪০, সীম কেজি ৫৫, এছাড়া বাজারে তেলাপিয়া মাছ ও এখন ২০০ টাকার নীচে নেই আর একটি ভাল মাছ যেমন, চাঁন্দা, কুরাল, ভোল মাছ ৬০০ টাকা নীচে নেই আর ইলিশের কথা বাদই দিলাম। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৫০ আর গরু মাংসের কেজি এখনো ৭০০ টাকা এভাবে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম যেন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। এছাড়া ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজের বাড়তি ফি, ডাক্তার এবং প্যাথলজির দ্বিগুন বাড়তি ফি সবধরণের ঔষধের দাম ও দ্বিগুন এক কথায় জীবন যেন এক যুদ্ধতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কারো কাছে তার তার কোন সদোত্তর নেই, কোথায় কোন আশার বানী নেই সবদিকে শুধু হতাশার মলিনতা।
এব্যাপারে জানতে চাইলে কালুর দোকান এলাকার ব্যবসায়ি নাছির উদ্দিন বলেন, বিশ্বাস করেন অনেক দিন হচ্ছে বাড়িতে একটু ভাল মাছ নিয়ে রান্না করে খেতে পারছিনা। এক কথা বললে দৈনিক আয় হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা কিন্তু সংসার খরচ ছেলেমেয়ের খরচ দিতে হচ্ছে দৈনিক ৭০০ টাকা এখন বাড়তি দু’শ টাকা কোথায় পাব তাই সবদিক থেকে বাঁচিয়ে কোন মতে বেঁচে আছি।
ঘোনারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি একটি হোটেলে চাকরী করি, বেতন পায় ১২ হাজার টাকা কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করেন শুধু পরিবারের দৈনিক ভাত খরচ যোগাড় করতেই আমার মাসের সব টাকা শেষ হয়ে যায়। তাহলে পরিবারের চিকিৎসা, লেখাপড়া, বিনোদন, অতিথেয়তা কোথায় পাব। প্রতিদিন হেটে অফিসে যায় সবাই জানে স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য হাটছি কিন্তু আসলে রিক্সা ভাড়া না থাকায় হাটি সেটা কাউকে বলিনা।
পিএমখালী ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে গ্রামের জীবন যাপন অনেক সহজ ছিল এখন গ্রামের চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। সকালে স্থানীয় হোটেলে নাস্তা করলে খরচ হতো ১০ থেকে ১৫ টাকা সেখানে এখন খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আগে গ্রামের কোন চাষী শাঁক সবজি কাধে করে নিয়ে গেলে আমরা টাকা ছাড়াই কেজি দুই কেজি নিয়ে নিলে কিছুই বলতো না, এখন একটা ফসলও দিতে চায় না। আসলে সেটা তার দোষ না সব কিছুর দাম বেড়েছে সে জন্য সবার সমস্যা হচ্ছে। সারা বছর চাষাবাদ করেও অনেকে বছরের খোরাক জোগাড় করতে পারছে না।
শহরের পেশকারপাড়া এলাকার রফিকুল আলম বলেন, কিছুদিন আগে আমার পিতার মৃত্যু হয়েছে এখন ফাতেয়া দিতেও টাকা নেই কিন্তু একটা সময় ছিল আমরা প্রতিবছর গরু জবাই করে মানুষকে খাওয়াতাম। যে যাই বলুক একটা কথা সত্য সাধারণ মানুষ খুবই অর্থনৈতিক সংকটে আছে।
কক্সবাজার দূর্নীতি দমন কমিশনের পিপি এড. আবদুর রহিম বলেন, দেশে যথেষ্ট উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন মান কি আসলেই উন্নয়ন হচ্ছে ? আমার মতে দেশে সামগ্রিকভাবে অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধ করা গেলে সাধারণ মানুষ আরো ভাল থাকতো। এখন সেবা নিতে মানুষকে যে পরিমান অর্থ অপচয় করতে হয় সেটা দেওয়ার মত অবস্থা ৫০% মানুষের নেই।
উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অজিত দাশ বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে পরে পৃথিবীর অনেক দেশে দ্রব্যমুল্যের অবস্থা সূচনীয় তবে সে সব দেশের মানুষ সইতে পারছে কারন তাদের রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থা উন্নত তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমরা এখনো সেই জায়গায় পৌছাতে পারিনি। সে জন্য ধনী গরিবের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে।