রাতে পাহাড় কেটে দিনে বিক্রি করছে মাটি। একেরপরএক পাহাড় কেটে সাবাড় করছে। পাহাড়ের মাটি বিক্রি করে ভরাট করছে বিভিন্ন স্থাপনা। এভাবে পাহাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট কাজ চলছে একটি পেট্টোল পাম্প নির্মাণের কাজ। সাড়ে পাঁচ কানি জায়গা ভরাটে প্রতিদিন আনা হচ্ছে শতশত ট্রাক মাটি। নেপথ্যে কাজ করছে এলাকার জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহল। অব্যাহত পাহাড় কাটার কারণে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এমন দৃশ্য দেখা দেখা গেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকায়।
প্রশাসন ও বনবিভাগের এমন উদাসীনতায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পাহাড়ি টিলা, প্রকৃতি ও বনজ পরিবেশ। এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এখন প্রতিনিয়তই এমন দৃশ্যই চোখে পড়ছে কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে। প্রভাবশালী চক্রের এমন বেপরোয়া মনোভাবে বরং দিনদিন এ ধ্বংসযজ্ঞ বেড়েই চলেছে। রহস্যজনক কারণে নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসন। এ কারণে দিনদিন ছোট হচ্ছে কক্সবাজার জেলার পাহাড় ও বনাঞ্চলের আয়তন। একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চালাচ্ছেন এই নিধনযজ্ঞ। পাহাড় কাটার এমন উৎসবে এ অঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্বিচারে পাহাড় কাটার বিষয়ে গণমাধ্যমে সোচ্চার হলেও প্রসাশনের তৎপরতায় মাস দিন তা বন্ধ থাকে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বিভিন্ন ছোট বড় পাহাড়ি টিলার মাটি কাটা।
অভিযোগ উঠেছে, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বাজারের দক্ষিণ প্রান্তে সাড়ে পাঁচকানি জায়গার উপর নির্মিত হচ্ছে একটি পেট্টোল পাম্প। সেখানে জায়গা ভরাটের জন্য প্রতিদিন আনা হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। দুটি স্কেভেটার দিয়ে চলছে মাটি সমান করার কাজ। এই জায়গা ভরাট করতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মাটি কেনা হয়েছে বলে দাবী করেছেন পেট্টোল পাম্পের মালিক এরশাদুল হক। প্রায় ২০ ফুট গভীর থেকে মাটি ভরাট করা হয়েছে।
পেট্টোল পাম্পের জন্য ভরাট করা জায়গাটিও সংখ্যালগু পরিবারের। অনেকটা জোরপূর্বকভাবে মাটি ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সংখ্যালগু পরিবারটি অসহায় হওয়ায় আইনের গড়াকলে ফেলে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তুলেন তারা। বাদ যাচ্ছে না সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গাও। বিশাল অংশ দখল করে পুরোদমে চলছে পেট্টোল পাম্পের কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বাজারের দক্ষিণ পাশে হাজী জাবের আহমদ গংয়ের মালিকানাধীন সাড়ে পাঁচ কানি জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি তাদের জায়গাতে নির্মিত হচ্ছে একটি পেট্টোল পাম্প। ওই পেট্টোল পাম্পের জায়গাটি ভরাটের কাজ করতে চারপাশে টিনের ঘেরা দেওয়া হয়েছে। সেখানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে মাটি ভরাটের কাজ। অন্তত অর্ধশতাধিক শ্রমিক দিয়ে কয়েকটি স্কেভেটার দিয়ে পুরোদমে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। পরে মাটি গুলো স্তুপ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। রাতভর কেটে দিনে সরিয়ে ফেলা হয় মাটি গুলো। এভাবে পাগলির বিল ও বুইজ্জাঝিরি এলাকার বিশাল আকৃতির ৭-৮টি পাহাড় সাবাড় করা হয়েছে। রাতে হলেই স্কেভেটার দিয়ে কাটা হয় পাহাড়। পরে দিনে বিভিন্ন স্থাপনা ভরাটের জন্য বিক্রি করা হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে সংরক্ষিত বনের উচু-নিচু পাহাড়। বর্তমানে ওই এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছুতেই থামছে না পাহাড় খেকোরা।
এদিকে গত দুইমাস ধরে ডুলাহাজারায় নির্মিতব্য পেট্টোল পাম্পের জায়গা ভরাট করার জন্য ট্রাক দিয়ে আনা হচ্ছে মাটি। রাত হলেই শুরু হয় মাটি ভরাটের কাজ। কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছে না। অন্তত দশ হাজার ট্রাক মাটি ফেলা হয়েছে ওই জায়গায়। স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগ পাহাড় কাটা বন্ধের বিষয়ে কোনো ভূমিকা না রাখার অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালীমহল পাহাড় কাটায় জড়িত রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
পেট্টোল পাম্পের মালিক এরশাদুল হক জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলাহাজারা বাজারের দক্ষিণ পাশে ১৯৮৮ সালে স্থানীয় এক হিন্দু পরিবার থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ কানি জমি ক্রয় করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ক্রয়করা জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি ওই জায়গার উপর একটি পেট্টোল পাম্প করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে লাইসেন্স প্রাপ্তিতে সবধরণের কাজ সম্পাদন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে তাদের জায়গাতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। সেখানে ডুলাহাজারাসহ চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকাতে বালু ও মাটি কেনা হয়েছে। তাদের জায়গাটি সড়ক থেকে প্রায় ১৯ ফুট গভীর ছিলো। মাটি ফেলে সড়কের সমান করা হয়েছে বলে জানান তিনি। জায়গার জন্য মাটি ও বালু ক্রয় করে কোন অপরাধ করেননি বলে দাবী করেন তিনি।
এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়ার সহকারি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ডুলাহাজারায় সড়ক দখল করে পেট্টোল পাম্প নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা দখল বন্ধ না করলে খুব শীগ্রই সওজ উচ্ছেদ করবে বলে জানান তিনি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেপি দেওয়ান বলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে পাহাড় কেটে কেউ স্থাপনা নির্মাণ করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, পাহাড় কেটে জায়গা ভরাট করছে এধরণের তথ্য জানা নেই। তবে পাহাড় কেটে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।