সীমান্তে চোরাইপথে মিয়ানমারের চোরাই গরু প্রবেশ নিয়ে চরম হয়রানিতে আছেন রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির পশু খামারি ও স্থানীয় পশু পালনকারীরা।
তারা অভিযোগ করেছেন, চোরাই গরু জব্দ করতে গিয়ে স্থানীয় খামারী ও কৃষকের পালিত গরু জব্দ করে নিয়ে যাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনী। বর্তমানে অভিযান আরো কড়াকড়ি করায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখন পালিত গরু বিক্রির জন্য বেরও করতে পারছে না তারা।
মঙ্গলবার (২০ মার্চ) সরেজমিনে রামুর গর্জনিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত এলাকায় গেলে ভুক্তভোগীরা তাদের এই দুর্দশার কথা জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন (৬৫) জানান, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বহুদিন ধরে মিয়ানমারের চোরাই গরু প্রবেশ করছে। পরে তাদের ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করা চোরাই গরু জব্দ করতে পাড়ায় পাড়ায় অভিযান চালায় বিজিবি। এসময় চোরাই গরু জব্দ করতে গিয়ে স্থানীয় খামার ও কৃষকের পালিত গরুও জব্দ করছে বিজিবি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান। ইতিমধ্যে অনেক স্থানীয় বাসিন্দার গোয়ালঘর থেকে জোর করে পালিত গরু নিয়ে গেছে তারা।
গর্জনিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, গর্জনিয়া গরু বাজারের একটি সুনাম আছে এখানে কক্সবাজারের অন্যান্য বাজারের চেয়ে সস্তায় গরু পাওয়া যায় সে জন্য অনেক দূরদুরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ গরু কিনতে আসে। আমরাও সারাবছর বাসাবাড়িতে গরু লালন পালন করে সে গুলো বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা লাভবান হয়ে সংসার চালায়। কিন্তু এখন সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে গরু নিয়ে সমস্যার কারনে আমরা স্থানীয় মানুষজন গরু বাজারে তুলতে পারছি না। যদি গরু বাজারে তুলতে চাই তাহলে স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন লাগে, আবার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেখানে অনেক হয়রানী করে। গরু কতদিন ধরে পালন করছি, কিভাবে করেছি, এমনকি গরুর জন্মপরিচয়ও দিতে হয়। তাও অনেকজন প্রত্যায়ন না দিয়ে ফেরত দেয়। আবার অনেকে প্রত্যায়ন নেওয়ার পরে বাজারে গরু বিক্রির জন্য তুলতে পারছে না। পথে পাহারা বসিয়ে চোরাই গরু বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনী। আমাদের মতে এটা জুলুম এবং অন্যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হামজা বলেন, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য ঘরের গরু বিক্রি করতে চেয়েছি সেখানেও সরকারি বাধার কারনে বিক্রি করতে পারিনি। এখন আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। এছাড়া আমার প্রতিবেশী তার ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে গরু বিক্রি করতে চাইলে তাও পারেনি এক কথায় গরু একটি বড় সাইজের হলে সেটা বার্মার গরু বলে বাজারে তুলতে দিচ্ছে না। আমাদের উপর এই নির্যাতন বন্ধের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ ইসমাঈল নোমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স্থানীয় মানুষ নানান ভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছে। স্থানীয় মানুষকে নিজের ঘরের গরু বিক্রি করতে প্রত্যায়ন নিতে হচ্ছে যা বাংলাদেশে আর কোথায় নেই। এটা চরম হয়রানী, আমি বিষয়টি রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছিলাম তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে দিবেন বলে জানিয়েছিলেন। এক কথায় বর্তমান গরু নিয়ে স্থানীয় মানুষ বেশ হয়রানী হচ্ছে বলে জানান তিনি।