১. স্বপ্ন দেখি আকাশছোঁয়ার। আশপাশের সমস্ত অন্ধকার দূর করে একটা নতুন ভোরের স্বপ্ন আমরা দেখি। এই স্বপ্ন দেখা আর বাস্তবায়ন করার মাঝে বিস্তর ফাঁরাক আছে। ফাঁরাকটুকুর মাঝে লুকিয়ে থাকে আমাদের দরিদ্রতা, পারিবারিক ঝামেলা, সামাজিক অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং সময়ের প্রতিকূল পরিবেশ। এসব পিছুটান আমাদের সামনের সমূহ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করা থেকে বিরত রাখবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু যে সংগ্রামী বালক শৈশব – কৈশোরের দুরন্তপনা পার করে এসেছে জীবনের জটিল মারপ্যাঁচের হিসেব কষতে কষতে তাঁদের কাছে এসবের মূল্য নেহাত পাঁচ-দশ টাকা পকেটে না থাকার মতোনই অতি সাধারণ একটা ব্যাপার।
২.আমাদের মধ্যে অনেককে দেখি , জীবনকে বড় আসরে দেখতে না পারার পেছনে নিজের আশেপাশের প্রতিকূল পরিবেশকে দোষারোপ করে। নিজের দুঃখ দুর্দশার দায় চাপিয়ে দেয় অন্যের উপর , খারাপ সময়ের উপর, প্রতিকূল পরিবেশের উপর। এরকম দায় দেওয়াটা আপাত দৃষ্টিতে সঠিক মনে হলেও আমার কাছে মনে হয়, এই দায় অন্যের উপর চাপিয়ে দিলে আদতে নিজের কোন লাভ নেই। কারণ, জীবনে বড়ো হওয়ার পথে হাজারটা বাঁধা আসবে, বিপত্তি ঘটবে অহরহ। সময়ের তুল ফাঁড় বিহেভিয়ারে হাসফাস করবে জীবন। সহজকথা, জীবনে এই হাসফাস অবস্থা অতিক্রম করতে যে কজন পারে তাঁরা স্বপ্ন দেখা এবং বাস্তবায়ন করার মাঝে যেটুকু ফাঁরাক সেটুকু ঘুচাতে পারে।
৩.জীবনে আপনি কোন কঠিন সময়ে পার করে আজ এতোদূর এসেছেন, কেন আপনার আজকের এই করুণ পরিণতি সেটা কেউ দিনশেষে গুনবে না। দিনশেষে মানুষ গুনবে, আপনি কে? আপনার সামাজিক অবস্থান কি? আপনার কত টাকা আছে? অথবা, আপনি কতটুকু পাওয়ার ওন করেন? এর বাহিরে বাকি আলোচনা কেবল গল্পের উপখ্যান, তামাসার উপজীব্য বিষয় হিসেবে আজ আমার আপনার সমাজে পরিচিত। কাজেই, আপনি আপনার প্রতিকূল পরিবেশের দায় দিয়ে নিজেকে সামাজিক আক্রমণ থেকে বাঁচাতে চাইলেও আপনি বাঁচাতে পারবেন না । কারণ এই সময়টায় এখন আর মানুষকে বুঝাবার সময় নেই । আশির দশকের সোনালী সময় আজ আর নেই ; সেটা যত তাড়াতাড়ি আপনি বুঝতে পারবেন তত তাড়াতাড়ি আপনার জীবনের জটিল পথ সহজ হবে ।
৪.এই সমাজ, কাছের – দূরের প্রায় সবকটা মানুষ আপনার খারাপ সময়ে আপনার সাথে থাকবে না। প্রথমত তাঁরা থাকবে না, দ্বিতীয়ত উপরন্তু আপনার উপর নানানভাবে বার্ডেন ক্রিয়েট করার চেষ্টা করবে। আপনাকে তাঁরা স্বাভাবিক পথ চলতে বাঁধা দিবে। আপনার বড়ো হওয়ার পেছনে একটা বাঁধার দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে তাঁরা। এরা অথচ, আপনার সামনে যখন আসবে তখন খুব ভালো মানুষের মতোন আপনার সাথে আচরণ করবে, কিন্তু পেছনে এরা হিংসায় হোক কিংবা অন্য যেকোন কারণে এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আপনাকে টেনে রাখতে চায় পেছনে। কিন্তু যে ছেলেটা নিজেকে চেনে, নিজের মেধা-মননের উপর যার প্রগাঢ় বিশ্বাস, নিজের শক্তি সামর্থ্য সম্পর্কে যে অবগত তাঁকে টেনে রাখা সহজ নয়। প্রতিকূল পরিবেশ তাঁকে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। এই পৃথিবীতে কিছু মানুষের জন্ম হয় উড়বার জন্য, তাঁদের ডানা থাকুক কিংবা না থাকুক তাঁরা জীবনে উড়বেই। জীবনের সমস্ত বাঁধা ডিঙিয়ে একদিন তাঁরা ঠিকই পৌঁছে যায় তাঁদের স্বপ্নের পথে। তারপর, একদিন তাঁদের ও টাকাকড়ি হয়, পাওয়ার ও ওন হয়। জীবনকে বড়ো আসরে দেখার সব রসদ এসে জুড়ো হয় তাঁদের জীবনের তরে।
৫.তারপর, তারপর কি হয় এই দুনিয়ায়? প্রকৃতির চেয়ে বেশী প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠে মানুষ। প্রকৃতি ছেড়ে দিলেও মানুষ সবসময় ছেড়ে দেয় না। মানুষ তাঁর বুকে এঁকে দেওয়া প্রতিটা ক্ষত চিহ্ন অক্ষরে অক্ষরে মনে রাখে। সময় যখন তাঁর নিকট আসে তখন সে সুদে আসলে মিটিয়ে দেয় সব। এরকম ঘটনা আমরা চাইলেই আমাদের সামনে অহরহ খোঁজে পাই। তাই সময় থাকতে আমদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। না হয় উপরওয়ালা কখন কাকে কীভাবে দুনিয়ার হিসেব বুঝিয়ে দেয় বুঝা বড় মুশকিল।
৬.একজন মানুষের জীবনের চলার পথে শুধু খারাপ মানুষের সাথে দেখা হয় তা কিন্তু না। মহান স্রষ্টা চলার পথে আশীর্বাদ হিসেবে আমাদের কাছে পাঠায় অনেক ভালো গুণী মানুষকে। যে সময়ে স্বার্থের দ্বন্দ্বে মানুষ হয়ে উঠছে অমানুষ, ঠিক সে সময়েও কিছু নিঃস্বার্থবান মানুষ আমাদের এই পৃথিবীতে এখনো আছে । তাঁরা পরম মমতায় আগলে রাখতে জানে, বিপদের দিনে পাশে এসে দাঁড়ায় একবার – দুবার, হাজারবার। এই মানুষগুলোকে পৃথিবীতে এখনো খোঁজে পাওয়া যায় বলে পৃথিবীটা এখনো এতটা সুন্দর। এইজন্য সুন্দর পৃথিবীর সুন্দর মানুষগুলোর কাছে শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যায় আমার নিজের সবটুকুন অহংকার। এই মানুষগুলোর ঋণ আপনি একদিন আকাশছোঁয়া বড় হলেও, কখনো শোধ করার ক্ষমতা রাখেন না। এই ঋণের বোঝা বরং মাথায় রাখতে হয় আশীর্বাদ হিসেবে।
লেখক :
তানভীর মোর্শেদ তামীম
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।