1. iliycharman7951@gmail.com : admin :
তবুও, সুন্দর জীবন গড়তে হবে আমাদের   - matamuhuri - মাতামুহুরী
শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

তবুও, সুন্দর জীবন গড়তে হবে আমাদের  

মাতামুহুরী ডেস্ক ::
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩
  • ১২৯ পঠিত
১. প্রতিটা মানুষের জীবনের গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদা, স্বতন্ত্র। তাই একজন মানুষের জীবনের গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে অপর একজন মানুষের জীবনকে জাজ করা কখনো সঠিক প্যারামিটার হতে পারে না। এই পৃথিবীতে দুঃখজনক হলেও চরম সত্য হচ্ছে, আমরা মানুষ হিসেবে খুবই জাজমেন্টাল। আমরা মানুষের জীবনের পরিক্রমা সম্পূর্ণরূপে পাঠ না করার পূর্বে মানুষকে জাজ করতে আরম্ভ করি। আমরা মানুষের জীবনের চরম সত্যিটা না জেনে কিংবা মানুষটার জীবনের আজকের এই করুণ পরিণতির পেছনের গল্পটা পুরোপুরিভাবে না জেনে আমরা জাজ করি এবং ক্ষেত্রবিশেষ একটা রায় ও প্রদান করি; অথচ এই রায়ের সাথে মানুষটার জীবনের আগে পিছে সত্যিকার অর্থে কোন রকমের মিল খোঁজে পাওয়া যায় না ।
২.পৃথিবীটা সব মানুষের জন্য সমান । পৃথিবীতে সকল মানুষের  জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান; এটি পুরোপুরিভাবে একটা মিসকনসেপশন এবং এই ধারণার সঙ্গে যৎসামান্য সত্যতা নেই। এই পৃথিবীটা বরং, সবচেয়ে বেশি অসমতার। এখানে সমতার বালাই নেই। এখানে সবকিছু নির্ভর করে আপনার লটারি অব বার্থের উপর। আপনি এখানে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করলে যে সুযোগ সুবিধাগুলো পাবেন, তার চেয়েও বেশি ব্যাটার লাইফ কিন্তু আপনি ইউরোপের দেশগুলোতে জন্মগ্রহণ করলে অটোমেটিক্যালি আপনি পেয়ে যাবেন। এই ব্যাটার ইনভারয়েনমেন্ট কন্ডিশন পাওয়ার জন্য এই প্রক্রিয়ায় আপনাকে কোন রকমের পরিশ্রম, সাধনা করতে হবে না। আপনি শুধুমাত্র ইউরোপে জন্মগ্রহণ সূত্রে এই ব্যাটার অপরসুনিটিটা পাচ্ছেন, যা আপনি থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিগুলোতে জন্মগ্রহণ করলে না ও পেতে পারেন ।
৩. একইভাবে, বাংলাদেশের সব পরিবারের সন্তান সমান সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বড় হয় না। পুঁজিবাদী সমাজ কাঠামোতে সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রত্যেকের বড় হওয়ার চিন্তা করা, বরং একধরণের নির্বুদ্ধিতার বহিঃপ্রকাশ। এইধরণের প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকটভাবে থাকবে, এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার মাত্র। তবে আজকের পৃথিবীর সব সুযোগ সুবিধা যখন আপনার টাকার উপর নির্ভর করে সেহেতু, আপনি যদি এখানে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী না হোন তাহলে আপনি সমাজে বিদ্যমান বাকি সব বৈষম্য নিজের চোখের সামনে পরিস্কারভাবে দেখতে পাবেন। আপনি এটা খেয়াল করবেন, যখন আপনার বাড়িতে আপনার গ্রামের সবচেয়ে নামীদামী ( তথাকথিত ) মানুষটি আসে তাঁকে আপনি আপ্যায়ন করার জন্য যেভাবে উঠেপড়ে লেগে যান ঠিক একইভাবে কিন্তু তাঁর চেয়ে কম মানের কেউ ( তথাকথিত ) যখন আপনার বাড়িতে মেহমান হিসেবে আসে তাঁর ক্ষেত্রে আপনি অতোটা অথিতিপরায়ণ হয়ে উঠেন না। এই যে দুমুখো নীতি, এটা আপনার ভেতরে অটোমেটিক্যালি যে মাপকাঠিটি ক্রিয়েট করে দেয় সেটা হচ্ছে ঐ দুজন ব্যক্তির মধ্যকার সামাজিক অবস্থান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু ।
৪. এখন যেহেতু এই পৃথিবীতে আপনি চলে এসেছেন, তাই সে সাথে আপনার পেছনে ফিরে যাওয়ার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই, আপনি আপনার খারাপ অবস্থানের জন্য নিজেকে, নিজের লটারি অব বার্থকে দায়ী করে নিজের উপরের সামাজিক ছাপকে প্রশমিত করতে পারেন না। কারণ, দিনশেষ করে আপনার যাপিত জীবনের জন্য আপনাকেই ফল ভোগ করতে হবে। এইজন্য, এই খারাপ কন্ডিশন থেকে আপনাকে উঠে আসার গল্প হতে হবে। আপনাকে এই পৃথিবীর অসমতার সাথে লড়াই করে সারভাইভ করতে হবে। এরকম অহরহ উদাহরণ আছে যারা সামাজিক অসমতা এবং কম সুযোগ-সুবিধার সাথে লড়াই করে এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন, যেখানে তাঁদের চেয়ে ব্যাটার অপরসুনিটি পেয়েও এই পৃথিবীর অনেক মানুষ পৌঁছাতে পারেনি। এক সময়ের চা বিক্রেতা , সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ; এবং আরেক বিখ্যাত মানুষ এপিজে আবুল কালাম যার পিতা রামেশ্বরম ও অধুনাবিলুপ্ত ধনুষ্কোডির মধ্যে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নৌকায় পারাপার করাতেন ; এক বেলা আধপেটা হয়ে দিন চলতো যাদের ; সে এপিজে আবুল কালাম অথচ দুনিয়ার সমস্ত প্রতিকূলতাকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিলেন ভারতের বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী। এবং সে সাথে  তখনকার সময়ে যে গ্রাম থেকে সরকারি কর্মকর্তা হওয়া ছিল বড়ো আশ্চর্যের ব্যাপার , তিনি সে অজপাড়া গ্রাম থেকে হয়ে দেখিয়েছিলেন ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি ।
৫. মোদ্দাকথা, দিনশেষ করে আমাদের সাথে কেউ থাকে না। দিনশেষে বরং দুনিয়ার কোলাহল ছেড়ে বাড়ি ফিরে আমরা ভীষণ একা । এই একাকীত্বের জীবনে নিজের অর্জন ছাড়া নিজের সাথে সে সময় আর কোনকিছু থাকে না। এখানে আপনি খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন, আপনার অর্জন না থাকলে এই সমাজের কাছে আপনার দু-পয়সার মূল্য নেই। এ কারণে, সমাজের কোন অববাহিকায় বড়ো হওয়ার ফলে, আপনি জীবনে বড়ো হতে পারেননি সেটি এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। সুযোগ-সুবিধা যথাযথ না পাওয়ার কারণে আপনি সমাজ-সভ্যতার সিংহাসন থেকে পিছিয়ে পড়েছেন, এই বাক্য দিয়ে আপনি নিজেকে বড়জোর সান্ত্বনা দিতে পারবেন, কিন্তু আপনার কৃতকর্মের জন্য, সংগ্রাম করে বড়ো না হওয়ার কারণে সৃষ্ট প্রতিটি সমস্যা আপনাকে ছেড়ে দিবে না। আপনাকে কষ্ট দিয়ে দিয়েই মারবে। কারণ, আপনার কষ্ট আপনাকেই ভোগ করতে হবে, তা আপনার হয়ে আর কেউ ভোগ করে দিবে না ।
৬.মূলত ব্যাপারটার উপসংহার হচ্ছে এই, আপনি কোথায় থেকে উঠে এসেছেন ? কেন আপনি আজ এতো ভেঙেচুরে খানখান ? কেন আপনার জীবনের আজ চরম দুঃখ আর হতাশায় নিমগ্ন ? এই বিষয়গুলো নিয়ে এখন আর কারো মাথা ব্যাথা নেই। সবার এখন মাথা ব্যাথা হচ্ছে, আপনি আজ কোন অবস্থায় আছেন ? ভালো জায়গায় আছেন কিনা ! থাকলে আপনি সোসাইটিতে দাম পাবেন , আর না থাকলে বিন্দুমাত্র  দাম পাবেন  না। সহজ হিসেব। আপনি কেন, কি কারণে কিছু করতে পারেননি সেগুলো দেখার টাইম আপনার সোসাইটির মানুষের কাছে নেই ।
লেখক :
তানভীর মোর্শেদ তামীম
শিক্ষার্থী , জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

© All rights reserved © 2019 LatestNews
Theme Customized BY Iliaych