কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ থেকে নিখোঁজের ২৬ দিন পর তিন বন্ধুর লাশ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। বুধবার (২৪ মে) দুপুরে তাদের লাশের সন্ধান পেয়ে সেখানে যান র্যাব এবং পুলিশের দুইটি টিম।
টেকনাফ দমদমিয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের লাশ গুলো উদ্ধার করা হয় বলে জানান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র। যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগর পাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউছুপ, চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রুবেল, কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান। তারা তিনজনই বন্ধু।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অপহৃত তিন বন্ধু গত মাসের ২৮ এপ্রিল ব্যক্তিগত কাজে টেকনাফ যায়। পথিমধ্যে সড়ক থেকে তাদের বহনকারী সিএনজি থামিয়ে একদল অপহরণকারীরা তাদের অপহরণ করে পাহাড়ের গহীন জঙ্গলে নিয়ে যায়। পরে তাদের ছেড়ে দিতে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে নির্যাতনের ভিডিও পাঠায় পরিবারের কাছে। পরিবারের দাবী অপহরণকারীরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য ছিল। তারা প্রায় সময় টাকা না দিলে হত্যার হুমকি দিত।
ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকটি সংস্থায় যোগাযোগ রক্ষা করে। কিন্তু গহীন জঙ্গল এবং অপহরণকারীরা বার বার স্থান পরিবর্তন করায় উদ্ধার এবং কাউকে আটক করা যায়নি। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করে র্যাব। পরে তার স্বীকারোক্তিতা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনের লাশ পাওয়া যায়।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ এবং র্যাবের কয়েকটি টিম গভীর পাহাড়ে অভিযান শুরু করছে। আটককৃত অপহরণকারীর দেখানো মতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে রোহিঙ্গা অপহরণকারীদের হাতে কক্সবাজারের স্থানীয় তিনজনের মর্মান্তিত মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো কক্সবাজারে শোকের ছায়া নেমে আসে। এসময় সর্বমহলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম নিয়ে আতঙ্ক এবং নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি এড.একরামুল হক বলেন, এই ঘটনা আমাদের সত্যি আতঙ্কেন মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেকদিন ধরে দেখছি টেকনাফ ভিত্তিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী স্থানীয়দের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছে। মাঝে মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটক হলেও প্রচলিত আইনে তাদের শাস্তি দৃশ্যমান হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দমাতে হলে নতুন আইন করে তাদের শাস্তি কার্যকর করতে হবে।
এব্যাপারে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি সমাজ সেবক আজিম সওদাগর বলেন, আমরা অনেকদিন আগে থেকে দাবী করে আসছি রোহিঙ্গাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রনের জন্য, এখন সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। শুরুর দিকে যখন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ব্য়াপরোয় হওয়া শুরু করছিল তখনি বিষয়টিকে ভালভাবে নজরে আনা দরকার ছিল। যা আমরা প্রায় সময় বলে আসছি কিন্তু সরকার সব সময় উদাসিন ছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কিভাবে সৃষ্টি হয় ? তারা কিভাবে অস্ত্র পায় সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাছাড়া কক্সবাজারের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের তালিকা করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
কক্সবাজার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হোসাইনুল ইসলাম মাতবর বলেন, রোহিঙ্গারা দিন দিন আমাদের জন্য আতরঙ্কর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমরা প্রশাসন থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করে সহায়তা পাচ্ছি না। তাই তারা ব্য়াপরোয়া হয়ে পড়েছে। আমি মনে করি প্রয়োজনে আইনের সংশোধন করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের রায় কার্যকর করতে হবে।