কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১২ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিস্কারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খোদ বিএনপিরাই। তাদের দাবী এটা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের সাথে কোন রকম আলাপ আলোচনা না করে তাদের সুযোগ না দিয়ে এভাবে দল থেকে বহিস্কার করা উচিত হয়নি।
এদিকে দল থেকে সম্প্রতি বহিস্কার হওয়া ১২ বিএনপি নেতাকর্মী নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা নিয়ে পৌর নির্বাচনী মাঠে লড়াই করবেন বলে জানা গেছে।
সোমবার (২২ মে) বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন সাক্ষরিত একপ্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১২ জন নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তারা হলেন, কক্সবাজার জেলা কৃষকদলের আহবায়ক ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিল আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম মুকুল, কক্সবাজার পৌর মৎস্যজীবী দলের সভাপতি এম জাফর আলম হেলালী, জেলা বিএনপি’র সদস্য ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এস আই এম আক্তার কামাল আজাদ, কক্সবাজার পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি আবছার কামাল, সাধারণ সম্পাদক ওসমান সরওয়ার টিপু, কক্সবাজার পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম লিটন, জেলা যুবদলের সহ-প্রচার সম্পাদক শাহাব উদ্দিন শাহেদ, জেলা যুবদলের সদস্য এবং পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ওমর সিদ্দিক লালু ও কক্সবাজার পৌর যুবদলের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন রিয়াদ।
এ ছাড়াও বহিষ্কারের তালিকায় রয়েছেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আক্তার বকুল ও দফতর সম্পাদক জাহেদা আক্তার। তারা দুজনেই বর্তমান নির্বাচিত কাউন্সিলর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে তাদের আজীবন বহিস্কার করা হয়েছে।
এদিকে কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে ১২ জন জনপ্রিয় নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন বাবুল বলেন, আমার মতে এটা তাদের প্রতি অবিচার হয়েছে। বহিস্কার হওয়াদের মধ্যে অনেকে আজীবন বিএনপির জন্য ত্যাগ করে গেছেন। অনেকে মামলা মোকদ্দমায় জেল খেটেছে, এছাড়া অনেকে ২ বা ৩ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর তাই তাদের সাথে আলাপ আলোচনা না করে কোন ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বহিস্কার করাটা পুরো জেলার সাধারণ বিএনপি নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারছে না।
সমিতি পাড়া এলাকার বিএনপি নেতা আবুল কাশেম, নজির আহমদ সহ অনেকে বলেন, বিএনপির এমন দূর্দিনে মিছিল মিটিংয়ে আমাদের প্রয়োজন হয় কিন্তু এতবড় সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের একটু জানানোর প্রয়োজন অনুভব করলো না বিএনপির শীর্ষ নেতারা। আমাদের মনে হচ্ছে তারা সরকারি দল আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য এসব কাজ করছে। যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন, ছাবের আহামদ সহ অনেকে বলেন, বর্তমানে মেয়র পদে শুধু মাত্র দলীয় মনোনয়ন হচ্ছে কাউন্সিলর পদ উন্মোক্ত এখানে যে কেউ নির্বাচন করতে পারে। তাই কাউন্সিলর পরে বিএনপি নেতাদের নির্বাচন করতে বাধা দেওয়া ঠিক হয়নি। তাছাড়া বর্তমান কাউন্সিলররা নির্বাচিত হওয়ার পরে এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করেছে, মনোবল বাড়িয়েছে, তাদের দেখে অনেকে এখনো বিএনপিকে ধরে আছে। এখন তাদেরই বহিস্কার করলে এখানে দল করার জন্য মানুষ কোথায় পাব। আর যারা বহিস্কার করছে তারা মেম্বার পদে নির্বাচন করলেও মনে হয় ফেল করবে, তাই তারা কিভাবে বুঝবে জনগনের মন জয় কিভাবে করতে হয়। এক কথায় এটা খুব বাজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।
জেলা ছাত্রদলের অনেক সিনিয়র দায়িত্বশীলরা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটা সক্রিয় হয়ে উঠছিল, হঠাৎ করে বেশকিছু জনপ্রিয় নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করাটা আমরা মেনে নিতে পারছিনা। এর ফলে দলের কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সাধারণ মানুষ এই বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
ঈদগাও উপজেলা বিএনপির নেতা মনজুর আলম সহ অনেকে বলেন, উপজেলা সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাই জনস্বার্থে এই সিদ্ধান্ত পূর্ব বিবেচনা করা উচিত হবে।
এ ব্যাপারে বহিস্কৃত জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর প্রার্থী নাছিমা আক্তার বকুল বলেন, দলের প্রতি আমার সম্মান আছে কিন্তু মানুষের ভালবাসা ফেলে ঘরে বসে থাকতে পারবো না। তাই আমি নির্বাচন চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই।
জেলা কৃষক দলের সভাপতি আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ বলেন, আমি ১৩ বছর ধরে জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছি, এলাকার হাজার হাজার মানুষ আমাদের দিকে চেয়ে আছে, তাদের একটি অনিরাপদ স্থানে বা অনিরাপদ মানুষের হাতে তুলে দিয়ে কিভাবে ঘরে বসে থাকবো। আর জাতীয় নির্বাচনে যদি কোন কারনে বিএনপি ভবিষ্যতে অংশ নেয় তাহলে কোন মুখে ভোট চাইতে আসবো। আর যেহেতু আমাদের শোকজের জবাব দেওয়ার আগেই বহিস্কার হয়ে গেছি তাই আর করার কিছু নেই এখন নির্বাচন করে যাচ্ছি।
৭নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের মাঠে থাকা ওসমান সরওয়ার টিপু বলেন, আমি যতুটুক জানি কাউন্সিলর পদে কোন দল দলীয় মনোনয়ন দেয় নি। এটা উন্মোক্ত তাই এখানে বাধা দেওয়া ঠিক না। তবুও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আগেই বহিস্কার করা হয়েছে এখন আর পেছনে গিয়ে লাভ কি তাই নির্বাচন করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে এই সরকারের আমলে কোন নির্বাচনে দল বা দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেবে না। তাই এখানে স্থানীয় নির্বাচনে দলের কোন নেতানেত্রী অংশ নিতে পারে না। যেহেতু তারা নির্বাচন করছে তাই তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। যদি কোন সময় কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করে তাহলে আবার বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার হতে পারে।