সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউসার উদ্দিন কছির।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শোভন দত্তের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা, দূর্নীতি, টেন্ডারে অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়োগে অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলায় রোগীর মৃত্যুসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। তার এসব দূর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাফী এন্টারপ্রাইজের মালিক ও চকরিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি কাউসার উদ্দিন কছির।
গত ৪ জুন বিকালে তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে কাউসার উদ্দিন কছির জানান, টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে নিয়মিত রোগী ও করোনাকালিন রোগীদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করে গততিন অর্থ বছরের প্রায় ২৫ লাখ টাকার বিল অদ্যাবদি পরিশোধ করেনি। করোনার সময়ে তাৎক্ষনিকভাবে সরকারি বরাদ্দ না পেলেও আমার প্রতিষ্ঠান রোগীদের খাদ্য সাপ্লাই অব্যাহত রেখেছি। হাসপাতাল কর্তপক্ষ করোনার সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় আমি বাধ্য হয়ে প্রায় চারমাস পূর্বে উচ্চ আদালতে প্রাপ্য আদায়ে জন্য ২৯/১০/২০২২) রিট পিটিশন দায়ের করি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে ১১/১২/২০২২) রুল জারি করে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করে। এ আদেশ কোনভাবে বাস্তবায়ন না করে পুনঃরায় নতুন দরপত্র আহবান করে আমাকে পরিকল্পিত ভাবে তাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয় চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শোভন দত্তের। যা আমি ইতিমধ্যে মহামান্য হাইকোর্টে আদালতের আদেশ অবমাননা অভিযোগ দায়ের করি। ওই কর্মকর্তার নানা অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ মে মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনেরসহ উর্ধ্বতনমহলে কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে দরপত্র আহবান করার নিয়ম থাকলেও তা না করে অর্থবছরের শেষে মে মাসে এসে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য হাসপাতালের নিয়মিত রোগীদের পথ্য সহ অন্যান্য সামগ্রীর টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যা জুন ক্লোজিং নামে লুটপাট করার মানসে করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অর্থ বছরের শেষে এসে নতুন দরপত্র আহবান করে হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাক্তার শোভণ পরিকল্পিতভাবে তাঁর পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনজুমান ট্রেডিং এর মালিকের সাথে গোপন আঁতাত করে তাকে কাজ পেয়ে দেয়ার জন্য পায়তারা করছেন। যার ফলে গত ১০ মে টেন্ডার সিডিউল ক্রয়ের শেষ দিনে মোট ১০জন ঠিকাদার সিডিউল ক্রয় করে ড্রপিংএর শেষ দিন ১১ মে অংশ গ্রহণকারী ঠিকাদারের মধ্যে ৯জন ঠিকাদারকে বাধা প্রদান করে। ৯জন ঠিকাদার সিডিউল দাখিলে বাধা প্রদান করে শুধু মাত্র তার একটি সিডিউল ড্রপিং করা হয়। অন্য ৯জন ঠিকাদারকে টেন্ডার সিডিউল ড্রপিং করতে দেয়নি।
অভিযোগে আরও জানা যায়, ওইদিন এ হাসপাতালের টেন্ডার কমিটির সভাপতি ডাক্তার শোভণ দত্তকে তা লিখতভাবে ৯জন ঠিকাদার অভিযোগ করলেও তার কোন প্রতিকার ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে ঠিকাদারগণ অসহায় হয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বলে তারা জানান। তাছাড়া ডা. শোভণ দত্ত যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। করোনাকালে হাসপতালের বরাদ্দের টাকা ভাইচারের মাধ্যমে লোপাট ও ৩১৫ কর্মচারীর বেতনভাতা থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে চকরিয়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: এমরানুল ইসলাম চকরিয়া স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডাক্তার শোভণ দত্তের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু সহ ব্যাপক অনিয়ম ও বিভিন্ন দূর্নীতির অভিযোগ নিয়ে গত ১১ মে তার স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রেরণ করেন। তার বড় ভাই ফোরকানুল ইসলাম (৩৫) কে পেটের ব্যাথা নিয়ে গত ৫ মে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালের ৩৫ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করালেও তিনদিন ধরে বেডে রেখে দেয়। কর্মরত চিকিৎসার অবহেলায় গত ৭ মে এ্যাপাডেসাইটিস ভার্ষ্ট হয়ে সে মারা যায় বলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক জানান এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রদান না করায় তার এ অবস্থা হয়েছে তারা মনে করেন। এভাবে একাধিক রোগী চিকিৎসকের অবহেলার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শোভন দত্ত বলেন, চকরিয়া হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য সরবরাহের জন্য চলতি বছর দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্র খোলার দিন নিয়মনীতি মেনে মেসার্স আনজুমান ট্রেডিং অংশগ্রহণ করায় প্রতিষ্ঠানটি চুড়ান্তভাবে কার্যাদেশ পেয়েছে। এখানে কোন ধরণের অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মেসার্স রাফি এন্টারপ্রাইজের মালিক করোনাকালে খাদ্য সরবরাহ করেছিলো। ওইসময়ের বিল গুলো প্রস্তুত করে ঢাকা অফিসে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। অহেতুকভাবে আমাকে অভিযুক্ত করছেন। নিয়ম অনুযায়ী বিল গুলো পাবেন বলেও জানান তিনি।