কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নদীতে ভেসে আসা লাকড়ি ধরতে গিয়ে শাহ আলম নামে এক যুবক নিখোজ রয়েছে। এখনো তার খোজ মেলেনি। অপরদিকে বরইতলী ইউনিয়নে দেয়াল ধসে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সবুজপাড়া গ্রামের নাজেম উদ্দিনের দুই সন্তান তাবাসুম (১) ও সাবিদ (৫)। তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান।
এদিকে টানা পাঁচদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীতে বন্যার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপকূলীয় ইউনিয়নের মানুষ গুলোকে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এতে বন্যায় অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার ১৭টি ও একটি পৌরসভায় গত পাঁচদিনের মুষলধারে বৃষ্টি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ উপকূলীয় ইউনিয়ন গুলোর মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। চিরিংগা ও রামপুর মৌজায় প্রায় ত্রিশ হাজার একর চিংড়িঘেরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ভেসে যাওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। কোনাখালী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ, ফাঁসিয়াখালী ঘুনিয়ার বেডিবাঁধ অনেকটা ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। যে কোন মূূহুর্তে ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। গ্রামীণ সড়ক গুলো পানিতে ডুবে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বড়ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। বাড়ি-ঘর ডুবে থাকায় শতশত মানুষ আশ্রয়ন কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে পুরো চকরিয়া উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবারে ছোলার মধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করায় রান্না বান্নার কাজ করতে পারছে না। অনেকে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। গ্রামীণ সড়ক গুলো ডুবে থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলা শহরের সাথে। কাকারা ইউনিয়নের বার-আউলিয়ানগর এলাকার মানুষ নৌকা নিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয়রা জানান, পুরো উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলেও এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন ধরণের ত্রাণ সামগ্রী পৌছায়নি। চরম দূর্ভোগে পড়েছে বেশিরভাগ ইউনিয়নের মানুষ। সারাদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত পাঁচদিনে এসব এলাকার শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারছে না। গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পুরো উপজেলায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওরঙ্গজেব বুলে বলেন, তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিন শতাধিক ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যে কোন মুুহুর্তে মন্ডলপাড়া ও হাজীপাড়া গ্রাম নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাতামুহুরী নদীতে ভেসে আসা লাকড়ি ধরতে গিয়ে শাহ আলম নামের এক যুবক নিখোঁজ রয়েছে। তবে তাকে এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, তার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে রয়েছে। মানিকপুর এলাকার সবচেয়ে পুরনো কিউকের মসজিদ যে কোন মুহুর্তে নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানান, ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে পুরো উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। গতবারের তুলনায় এবারে একটু পানি বেশি। বন্যার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৭টি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বানভাসি মানুষকে আশ্রয়ন কেন্দ্র গুলোতে উঠানো হয়েছে। উপকূলের মৎস্য ঘেরের স্লুচ গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সার্বক্ষণিক এলাকার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বরইতলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সবুজপাড়া গ্রামে দেয়াল ধসে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।